অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : তীব্র শীতে তাপমাত্রা যখন ৬ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গিয়ে তা অনুভূত হতো ০ থেকে ২ ডিগ্রির মতো তখন তা ঠেকানোর জন্যে হতদরিদ্রদের কাছে পাটের বস্তা ও খড় দিয়ে তৈরি বিছানাই ছিল মূল উপায়।
হিমালয় অঞ্চলের পাদদেশে দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে যেখানে তারা বাস করতো সেখানকার বেশিরভাগ ঘরেরই ছিল বাঁশের তৈরি বেড়া, যা প্রায়ই ফেলে দেয়া পলিথিন ও মরচে পড়া টিন দিয়ে তৈরি।
এখন তারা আধা পাকা ঘরের মালিক। যা তাদের রক্ষা করে শীতের নিষ্ঠুর ছোবল থেকে। এ জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পকে ধন্যবাদ।
দরিদ্রদের জন্যে আশ্রয়ণ সরকারের জোর প্রচারণার কারনে এখন উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৯০ হাজার ৮৬৬ টি পরিবার ইটের তৈরি দেয়াল ও টিন শেডের আরামদায়ক ঘরের মালিক।
পঞ্চাশ বছর বয়সী লোকেশ মার্ডি তাদেরই একজন যারা সরকারের একটুকরো খাস জমিতে আরামদায়ক আবাসের মালিক। অথচ আগে এই লোকেশ মার্ডির পরিবার স্থানীয়ভাবে ‘তাতারী ঘর’ হিসেবে পরিচিত ঘরে বাস করতো যা বাঁশ, টিন ও খড় তৈরি দিয়ে তৈরি ছিল।
পীরগঞ্জে নতুন ঘরে বসে বলেন, আমাদের নিজের কোন জমি ছিল না। আমাদের পূর্বপুরুষরা ভাগ্যকে মেনে নিয়ে প্রজন্ম ধরে ‘তাতারী ঘরে’ বাস করতো।
আবেগঘন কন্ঠে তিনি বলেন, শীতের রাতে ঘরে শিশির পড়লে আমাদের বাবা মা আমাদের পাটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতেন। কিছুদিন আগে পর্যন্ত আমাদের দুই ছেলে ও এক কন্যার ক্ষেত্রেও আমরা তাই করেছি।
মাহালি জাতিগত সংখ্যলঘু গোষ্ঠীর লোকেশ আরো বলেছেন, তাদের কুঁড়েঘর বৃষ্টির পানির ভেতরে ঢুকে পড়া রোধ করার মতো কার্যকর ছিল না।এমনকি ঝড়ে টিকে থাকার মতোও যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল না।
তার পাঁচ সদস্যের পরিবারের বর্তমান আবাসস্থল দুই শতাংশ জমিতে নির্মিত একটি বাড়ি যেখানে রয়েছে দু’টি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও একটি বারান্দা।
বাঁশ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে সংসারে আয় করা লোকেশ আরো বলেন, এ যেন স্বপ্ন সত্যি হওয়া। আমি শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ।
পীরগঞ্জের পাড়ায় এখন ২১টি মাহালি পরিবার একই রকম ঘরের মালিক।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পঞ্চগড় জেলায় সাধারণত সর্বনি¤œ তাপমাত্রা থাকে। শীতে লোকজনকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় যা প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হয়ে ওঠে।
আবহাওয়বিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মালিক বলেন, জানুয়ারিতে পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলায় রাতে ৬ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, ঘন কুয়াশার কারনে এটি ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো অনুভূত হয়।
দুদু মিয়া যার বয়স ৬০ বছর। জীবনের অধিকাংশই সময়ই পার করেছেন পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলায় মহন পাড়ায় সরকারের এক টুকরো খাস জমিতে অস্থায়ীভাবে তৈরি ‘তাতারি ঘরে’।
তিনি বলেন, ‘শীতকালে আমাদের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। সন্তানদের জন্যে গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করতে না পেরে কাঁদতাম। এখন আমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারছি। কারণ, আশ্রয়ণ আমাদের আরামদায়ক স্থায়ী ঘর দিয়েছে।’
দুদু মিয়া বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমাদের জন্যে অনেক করেছেন। তিনি আমাদের নিয়ে ভেবেছেন। আমরা তার জন্যে দোয়া করি।’
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ি উপজেলার লাল খা পুকুরে জরাজীর্ণ কুঁড়েঘরে ৭৪ বছর পার করেছেন সপ্তদশবর্ষী মুজাহার হোসেন।
গুরুত্র অসুস্থ মুজাহার বলেন, ‘আমার নিজের কোন জমি ছিল না। ছয় সদস্যের পরিবারের একজন দিন মজুর হিসেবে কোন জমি সংগ্রহ করার মতো সামর্থ্যও আমার ছিল না।’
শীতের সকালে হুডি সোয়েটার পরে বারান্দায় বসে রোদ পোহাতে পোহাতে এসব কথা বলেন মুজাহার।
আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯৯৭ সাল থেকে এ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮১টি পরিবারকে পুনবার্সিত করা হয়েছে।
এদের মধ্যে ৯০ হাজার ৮৬৬টি পরিবার রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ এবং কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার বাসিন্দা।
Leave a Reply